বিভূতিভূষণের প্রেতাত্মা দর্শন | সুমন ঘোষ

 


 বিভূতিভূষন বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলা কথা সাহিত্যের এক নক্ষত্র। ত্রয়ী বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে তিনি অন্যতম। তাঁর লেখা “পথের পাঁচালী”, “আগন্তুক”, “অশনি সংকেত”, “আরণ্যক” বাংলা সাহিত্যের সম্পদ। তবে সাহিত্য রচনার পাশাপাশি তিনি শুরু করেন প্রেতচর্চা। হ্যাঁ কথা বলেছিলেন নিজের মৃত স্ত্রীর সঙ্গে। জনৈক সন্ন্যাসীর সঙ্গে শুরু করেন প্রেতচর্চা। যে স্কুলে মাস্টারি করতেন সেখানে দল পাকিয়ে প্ল্যানচেট করার অপরাধে চাকরিও যায় তাঁর। প্রথম পক্ষের স্ত্রী গৌরী আর বোন মণির পরপর চলে যাওয়াকে তিনি মানতে পারেন নি সহজে । ভেঙে পড়েছিলেন ভীষণ আর এই মৃত্যু শোক কাটানোর জন্য তিনি কলকাতায় আসেন। কলকাতায় এসেই জড়িয়ে পড়েন পরলোকচর্চায়। এরপরে যোগ দেন কলকাতা থিওসফিক্যাল সোসাইটি তে। অবিরাম চলতে থাকে অশরীরীর সঙ্গে বার্তালাপ। দ্বিতীয় স্ত্রী কল্যাণীর বাবা অর্থাৎ তাঁর শ্বশুরমশাই ষোড়শীকান্ত ছিলেন তান্ত্রিক। তাঁকে পেয়ে তাঁর যেন শাপে বর হল। বিখ্যাত ভৌতিক সিরিজ তারানাথ তান্ত্রিক তিনি তাঁর শ্বশুরমশাইয়ের জীবন অবলম্বনে লিখেছিলেন। তাঁর সাহিত্যচর্চাতেও ধীরে ধীরে প্রকট হতে থাকে পরকাল নিয়ে চিন্তাভাবনা। তাঁর লেখা “ দেবযান ” পড়লে বোঝা যায় যে তিনি সেইসময় কতটা মগ্ন হয়ে পড়েছিলেন পরলোক চর্চায়। শোনা যায় শব সাধনার মতো কঠিন সিদ্ধি ও শুরু করেছিলেন তিনি। তাঁর ভাই নুটুর স্ত্রী যমুনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘উপল ব্যথিত গতি’-তে বিভূতির শেষ সময়ের একটি বিশেষ ঘটনার কথা মেলে।


যমুনা লিখেছেন, ঘাটশিলায় মৃত্যুর কয়েক দিন আগে ফুলডুংরি ঘুরতে গেলেন। সঙ্গে অনেকেই। দল থেকে আলাদা হয়ে একটি জায়গায় নাকি দেখেন ছেঁড়া কাপড়ের টুকরো ছড়িয়ে। খান কয়েক পাথর সাজানো। একটি শববাহী খাট ওল্টানো। আর একটি খাটিয়ায় মৃতদেহ ঢাকা দেওয়া। বনের মধ্যে, বিভূতিভূষণ গিয়ে টান মেরে ঢাকা সরিয়ে ফেলেন!


তার পরেই তাঁর আর্ত চিৎকার!


এ কার শরীর!


ধড়ের উপর যে মুখটি, সেটি অবিকল তাঁর!


শেষবেলায় ছেলে তারাদাস অসুস্থ হয়ে পড়লে, একদিন স্নান সেরে ফিরে নাকি দেখেছিলেন, ছেলের মাথার কাছে বসে রয়েছে কেউ। বিভূতি বুকে জড়িয়ে নেন তারাদাসকে। বলেন, ‘‘ওকে দেব না।’’


সেই বিদেহী আগন্তুক তখন নাকি বলে ওঠে, ‘‘তোমার ছেলের আয়ু নেই। ওকে যেতে দাও আমার সঙ্গে।’’


বিভূতি সন্তানকে আঁকড়ে বলেন, ‘‘আমার আয়ু দিচ্ছি। তুমি চলে যাও! এরপর আর বেশিদিন বাঁচেননি তিনি। যেই পরলোক নিয়ে তাঁর এতটা আকুতি ছিল, সেখানেই পাড়ি দেন সব্বাই কে ছেড়ে।

                    


 লেখক পরিচিতি ; জন্ম ১১ ই ডিসেম্বর ,২০০৩ সালে ; বোলপুর শান্তিনিকেতন শহরে মামার বাড়িতে। বাবার নাম ধনঞ্জয় ঘোষ আর মায়ের নাম তাপসী ঘোষ। মা বাবার তিন সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় সন্তান। বর্তমানে বোলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণীর কলা বিভাগের ছাত্র । ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনা করার ইচ্ছা আছে । পুরোনো এবং ঐতিহাসিক জিনিসপত্র সংগ্রহ করি । বই পড়তে , লেখালেখি করতে , ক্রিকেট খেলতে খুব পছন্দ করি । বড়ো হয়ে গরীব বাচ্চা দের বিনা মূল্যে শিক্ষা দেওয়ার ইচ্ছা আছে ।

1 মন্তব্যসমূহ

  1. অসাধারণ । এই অবিকল নিজের মুখ দেখা ও ছেলের বিষয়টি আগে আনন্দবাজার পত্রিকায় একটি রবিবাসরীয় প্রতিবেদনে পড়েছিলাম । তারানাথ তান্ত্রিকের কথাও লেখা ছিল সেখানে তবে তাঁর শ্বশুরমশাইয়ের জীবন অবলম্বনে তা এখন জানলাম । তাঁর রোমাঞ্চকর জীবনকাহিনী বরাবরই আকর্ষক ।

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন