বিস্মৃত সঙ্গীতশিল্পী রাজেন্দ্রপ্রসাদ রায় | ঋষিকল্প পাল



 কুচবিহারে রাগপ্রধান সঙ্গীতচর্চার ধারা পুরনো হলেও ঊনবিংশ শতাব্দী থেকে শাস্ত্রীয় ও রাগপ্রধান সঙ্গীত-চর্চা বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়। ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রায় মধ্যভাগ থেকে বিশিষ্ট সঙ্গীতজ্ঞ ডেঙ্গর বসু, রামচন্দ্র ঘোষ, কৃষ্ণধন বন্দ্যোপাধ্যায়, রাধাগোবিন্দ গোস্বামী (রাধিকাপ্রসাদ গোস্বামী?) এবং ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগ ও বিংশ শতাব্দীর আদিভাগে রায় চৌধুরী সতীশচন্দ্র মুস্তোফী, রায় চৌধুরী সুরেশচন্দ্র মুস্তোফী, রাজেন্দ্রপ্রসাদ রায় প্রমুখর নাম জানা যায়। উল্লিখিত সঙ্গীতজ্ঞদের মধ্যে কৃষ্ণধন বন্দ্যোপাধ্যায়, সতীশচন্দ্র মুস্তোফী ও রাজেন্দ্রপ্রসাদ রায়-এর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য 


চিত্র: রাজেন্দ্রপ্রসাদ রায় (~১৮৭৫—২৩ এপ্রিল, ১৯৩৯)।


বাংলার কারিকাখ্যাত ঘোষ বংশের আদিপুরুষ মকরন্দ ঘোষের অষ্টমতম উত্তরপুরুষ ছিলেন নরসিংহ ঘোষ ঠাকুর। নরসিংহ পরগণা জাফর উজিয়ালের ("জফর উজিয়ালের") "সাবেক জমিদার" ছিলেন।(১) তাঁর নিবাস ছিলো ইদিলপুর। তিনি ইদিলপুর থেকে নিবাস পরিবর্তন করে "চারি পাড়া"-য় বসতি স্থাপন করেছিলেন।(২) সম্ভবত, তাঁর কোনো উত্তরসূরী চারি পাড়া পরিত্যাগ করে টাঙ্গাইলে নিবাস পরিবর্তন করেছিলেন। কিন্তু, কোন সময়ে এই নিবাস পরিবর্তন ঘটেছিল সে বিষয়ে সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। মকরন্দ ঘোষ থেকে ঊনবিংশতিতম ও নরসিংহ ঘোষ ঠাকুর থেকে দ্বাদশতম উত্তরপুরুষ ছিলেন গোবিন্দপ্রসাদ রায় (ঘোষ রায়)।(৩) গোবিন্দপ্রসাদ অথবা তাঁর পূর্ববর্তী প্রজন্ম অধুনা বাংলাদেশের ময়মনসিংহের (অবিভক্ত) টাঙ্গাইলের আটঘড়ি গ্রামে বসবাস করতেন। সেখানে তাঁদের একটি ছোট 'জোতদারী' ছিলো।(৪) আটঘড়ি গ্রাম থেকে কোনো এক পুরুষ ভূতপূর্ব কুচবিহার রাজ্যে এসেছিলেন। কিন্তু কে এবং কেন এসেছিলেন তা জানা যায়নি। গোবিন্দপ্রসাদ কুচবিহারের অধিবাসী ছিলেন এবং পেশাগতভাবে উকিল ছিলেন।(৫) তাঁর তিন পুত্র ছিলো — অন্নদাপ্রসাদ, নগেন্দ্রপ্রসাদ ও রাজেন্দ্রপ্রসাদ। গোবিন্দপ্রসাদের স্ত্রী-র নাম কিংবা তাঁদের কোনো কন্যা সন্তান ছিলো কিনা জানা যায়নি। পুত্রদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ ছিলেন রাজেন্দ্রপ্রসাদ।(৬) রাজেন্দ্রপ্রসাদ আনুমানিক ১৮৭৫ সাধারণাব্দে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি জেঙ্কিন্স স্কুল থেকে ১৮৯৩ সাধারণাব্দে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হ'ন। কিন্তু, রাজেন্দ্রপ্রসাদের পরবর্তীতে শিক্ষাজীবন সম্বন্ধে আর কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। শুধুমাত্র জানা যায় তিনি বি.এল. বা ব্যাচেলার অফ ল'স-ডিগ্রী অর্জন করে আইন-ব্যবসায় প্রবেশ করেছিলেন।(৭) মহারাজা জিতেন্দ্র নারায়ণ ১৯২০ সাধারণাব্দের ১ এপ্রিল রাজেন্দ্রপ্রসাদ-কে কুচবিহারে রাজ্যের আইন সভা বা লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের অতিরিক্ত সদস্য নিযুক্ত করেছিলেন।(৮) পেশাগতভাবে রাজেন্দ্রপ্রসাদ কুচবিহারের একজন প্রথম শ্রেণীর প্লীডার ছিলেন এবং কুচবিহার রাজ্যের 'স্টেট প্লীডার'-এর উচ্চ-পদাভিষিক্ত হয়েছিলেন।(৯) ব্যক্তিজীবনে রাজেন্দ্রপ্রাসাদ ছিলেন সঙ্গীতপ্রাণ। সঙ্গীতাচার্য কৃষ্ণধন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে রাজেন্দ্রপ্রসাদ সঙ্গীত ও সেতার শিক্ষা করেছিলেন এবং কৃষ্ণধনের শিষ্যদের মধ্যে তাঁর স্থান ছিলো "অনেক উচ্চে"।(১০) বিশিষ্ট সঙ্গীতজ্ঞ ও সঙ্গীত-পরিচালক হরিশচন্দ্র পালের একটি নোট ডায়েরী (অপ্রকাশিত) থেকে গুরু কৃষ্ণধন বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি রাজেন্দ্রপ্রসাদের "সম্ভ্রম"-এর কথা জানা যায়। তাঁর ডায়েরী থেকে আরও জানা যায় যে রাজেন্দ্রপ্রসাদ মুখ্যত ধ্রুপদী সঙ্গীতচর্চা করতেন। তিনি ধ্রুপদ, মোতী (?) মিঞার টপ্পা, খেয়াল প্রভৃতি গাইতেন।(১১) কোচবিহার দর্পণ পত্রিকায় (১৯৩৯ সা.অ.) রাজেন্দ্রপ্রসাদের সেতার ও কণ্ঠস্বর সম্বন্ধে পত্রিকা সম্পাদক স্মৃতিচারণায় লিখেছিলেন — "... তাঁহার মধুর কণ্ঠ—সঙ্গীত লহরী, নিপুণ মিষ্ট হস্তের সেতার নিক্কণ এখনও যেন হৃদয়ে হৃদয়ে ঝঙ্কৃত হইতেছে। ... কি মধুর—হৃদয়গ্রাহী যে সেতার নিক্কণ মুর্ত্ত হইত রাজেন্দ্রপ্রসাদের হস্তে! (পুরনো বানান অপরিবর্তিত)"(১২) রাজেন্দ্রপ্রসাদ রাগপ্রধান সঙ্গীত-চর্চার সাথে সাথে কীর্তন গানও গাইতেন। রাজেন্দ্রপ্রসাদের ছিলো মধুর ও দরাজ কণ্ঠ। কীর্তন গাইবার সময় "ভক্তিপ্রবণপ্রাণ" রাজেন্দ্রপ্রসাদের ভাব বিহ্বলতার উল্লেখ মেলে — "কীর্ত্তনের তাল লয় সুর ব্যঞ্জনায় তাঁহার আয়ত লোচন ভাবাবেশে আর্দ্র হইত, তাঁহার মত দেরাজ গলা কমই দেখা যায়"।(১৩) প্রসিদ্ধ সঙ্গীতশিল্পী আব্বাসউদ্দীন আহমদ তাঁর আত্মজীবনীতে রাজেন্দ্রপ্রসাদের সঙ্গীত-প্রতিভা সম্বন্ধে লিখেছেন এবং তাঁকে সমগ্র উত্তরবঙ্গের (অবিভক্ত ভারতবর্ষের) শ্রেষ্ঠ খেয়াল শিল্পী বলে অভিহিত 

করেছেন — "রাজেনবাবু তখনকার দিনে সারা উত্তর বংগের মধ্যে শ্রেষ্ঠ খেয়াল গাইয়ে ছিলেন। অমন দরাজ কণ্ঠ আর দ্বিতীয়টি শুনিনি আজ পর্যন্ত। সেতারেও তাঁর মিষ্টি হাত ছিল।"(১৪) সেতার ব্যতিরেকে রাজেন্দ্রপ্রসাদ এস্রাজ, তানপুরা, হারমোনিয়াম, পাখোয়াজ এবং ভালো তবলা বাজাতেন। তিনি সঙ্গীত রচনা, সুরসঞ্জনা ও স্বরলিপি-করণ-ও করতেন। তাঁর রচিত কীর্তনাঙ্গের একটি গান (মুখড়া) — "কহ না নিতাই, কহ না নিতাই, কহ না নিতাই/ জনম ভরিয়া কহ না নিতাই, নিতাই, নিতাই, নিতাই (গানের সুর জানা যায়নি)।" কথিত আছে তিনি একটি রাগের অভিষ্কার করেছিলেন।(১৫)

রাজেন্দ্রপ্রসাদের বাড়িতে বসতো গানের আসর।  চারণকবি মুকুন্দ দাস কুচবিহারে এসেছিলেন বলে জানা যায়। তবে তিনি কুচবিহারে কবে এসেছিলেন অথবা একাধিক বার এসেছিলেন কিনা এবং কোথায় কোথায় অনুষ্ঠান করেছিলেন সে বিষয়ে সমসাময়িক লিখিত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। ড. নৃপেন্দ্রনাথ পাল তাঁর একটি রচনায় লিখেছেন — "চারণকবি মুকুন্দ দাসের কোচবিহারে আগমন বিষয়ে একাধিক গল্প এখানে প্রচলিত।" ড. পাল স্মৃতিভিত্তিক প্রমাণের সাপেক্ষে লিখেছেন যে মুকুন্দ দাস ১৯২০-১৯২১ সাধারণাব্দ নাগাদ (অন্ততঃ একবার) কুচবিহারে এসে নাটক ও স্বদেশী ভাবনার গান করেছিলেন। তিনি কুচবিহার রাজবাড়ি ও ল্যান্সডাউন হলেও অনুষ্ঠান করেছিলেন।(১৬) মুকুন্দ দাস একবার কুচবিহারে এলে পর রায় বাড়িতে নিমন্ত্রিত হয়ে এসেছিলেন এবং সেখানে গান পরিবেশন করেছিলেন। কথিত যে রায় বাড়িতে মুকুন্দ দাসের আসর দেখার জন্য মহারাজা জিতেন্দ্র নারায়ণ (১৯১৩-১৯২২ সা.অ.) এসেছিলেন।(১৭) তবে গানের আসরটি কোথায় বসেছিল তা জানা যায়নি। বর্তমান জিতেন্দ্র নারায়ণ রোডের উত্তরদিকে রায় বাড়ির দক্ষিণ-পূর্বে টিনের ছাউনী দেওয়া অনেকটা ইংরেজির 'U' হরফ-আকৃতির পাকা ভবনটিতে (অংশত বর্তমান) ছিলো রাজেন্দ্রপ্রসাদের বৈঠকখানা। সাধারণত সেখানে বসতো সঙ্গীতের আসর।(১৮) আনুমানিক ১৯৩০ সাধারণাব্দ নাগাদ কাজী নজরুল ইসলাম স্কুল ও কলেজের মিলিত বার্ষিক মিলাদ উপলক্ষে আমন্ত্রিত হয়ে কুচবিহারে এসেছিলেন এবং দু'দিন ছিলেন। দ্বিতীয় দিন নজরুলকে কুচবিহার শহরের বিশিষ্ট জনদের বাড়িতে ঘরোয়া গানের আসরের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। নজরুল কুচবিহার থেকে একসময় প্রকাশিত পরিচারিকা (নবপর্য্যায়) পত্রিকার সহকারী সম্পাদক, সাহিত্যিক জানকীবল্লভ বিশ্বাস, বিশিষ্ট শিক্ষক ও সাহিত্যিক বিমলচন্দ্র চক্রবর্তী, পরবর্তীতে প্রসিদ্ধ গীতিকার শৈলেন রায়-এর বাড়ি-সহ রায় বাড়িতেও গিয়েছিলেন এবং রাজেন্দ্রপ্রসাদের বৈঠকখানা ঘরে গানের আসর বসেছিল। প্রতিটি ক্ষেত্রেই নজরুল তাঁর লেখা জাতির নবজাগরণের গান গেয়েছিলেন।(১৯) বিশিষ্ট সঙ্গীতজ্ঞ সরোজ রায়কত মাঝে মধ্যে জলপাইগুড়ি থেকে কুচবিহারে এলে রাজেন্দ্রপ্রসাদের বৈঠকখানায় গানের আসর বসতো। সরোজ রায়কতের গান শোনার জন্য রাজেন্দ্রপ্রসাদের বৈঠকখানাও নিমন্ত্রিণত শ্রোতাদের দ্বারা ভরে উঠতো। আব্বাসউদ্দীন আহমদ সেই সঙ্গীত আসরে উপস্থিত থাকতেন তবে, তখনও তিনি শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেননি। আসরের স্মৃতিচারণায় আব্বাসউদ্দীন লিখেছেন — "আমরা রবাহূতের দল বাইরে বসে চুপ করে শুনতাম আর আমি মনে মনে খোদার কাছে বলতাম— 'খোদা এমন গায়ক কবে হতে পারব, যেদিন আসরের সবার উৎসুক দৃষ্টি শুধু আমার উপর নিবদ্ধ থাকবে।' ... সরোজদার আসর বসলে তিনি (রাজেন্দ্রপ্রসাদ) আমাদের মত চুনোপুঁঁটিকে পাত্তা দিতেন না কিন্তু মনে মনে প্রশ্ন জাগত এমন আসরে গাইবার সুযোগ কি জীবনে আসবে না?"(২০) রাজেন্দ্রপ্রসাদের বৈঠকখানায় আয়োজিত সঙ্গীত আসরের উৎকর্ষতার গুণমান এর থেকে সহজেই ধারণা করা যায়। রাজেন্দ্রপ্রসাদের সাথে আব্বাসউদ্দীনের পরিচয় ছিলো। রাজেন্দ্রপ্রসাদের জ্যেষ্ঠ পুত্র সুনীলপ্রসাদ ছিলেন আব্বাসউদ্দীনের বাল্যবন্ধু। আব্বাসউদ্দীনের সাধ ছিলো রাজেন্দ্রপ্রসাদের কাছে সঙ্গীত-শিক্ষা গ্রহণ করার, এপ্রসঙ্গে তিনি মন্তব্য করেছেন — "সুনীলকে (সুনীলপ্রসাদ) তিনি (রাজেন্দ্রপ্রসাদ) খেয়াল শেখাতেন মাঝে মাঝে। আমার কণ্ঠেরও তারিফ করতেন, কিন্তু যেহেতু তিনি মুখ ফুটে কোনদিনও আমাকে শেখাতে চান নি আমিও তাই শিখবার মহা আগ্রহ সত্ত্বেও তাঁকে কিছু বলি নি।"(২১)

১৯৩৯ সাধারণাব্দের বৎসরাধিক কাল আগে হঠাৎ একদিন রাজেন্দ্রপ্রসাদ অবসন্ন হয়ে সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন। উচ্চ-রক্ত চাপের ফলে তাঁর এরকম হয়েছিল। তখন থেকেই তাঁর অসুস্থতার সূচনা হয়। সেই সময় সুচিকিৎসায় তিনি সুস্থ হয়ে উঠলেও আর কখনোই স্বাস্থ্য ফিরে পাননি। তিনি পুনরায় পীড়িত হলে উক্ত সালের ৩ জানুয়ারী তাঁকে চিকিৎসার জন্য কলকাতায় স্থানান্তরিত করা হয়। তাঁর পীড়ার সামান্য উপশম ঘটলে তিনি বায়ু-পরিবর্তনের জন্য দিল্লীতে যান।(২২) কুচবিহার রাজ্যের তৎকালীন সুপারিনটেনডেন্ট তথা স্টেট কাউন্সিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন মিঃ এল. জি. ওয়ালিস, এস্কোয়ার, আই.সি.এস. (১৯৩৬-১৯৩৯ সা.অ.)।(২৩) রাজেন্দ্রপ্রসাদের অসুস্থতার সংবাদে ওয়ালিস উদ্বিগ্ন ছিলেন। "সহৃদয়" ওয়ালিসের প্রচেষ্টায় রাজসরকার থেকে রাজেন্দ্রপ্রসাদের জন্য কিছু অর্থ সাহায্য ও পূর্ণ বেতনে বিদায়ের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু, সমস্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে ১৯৩৯ সাধারণাব্দের ২৩ এপ্রিল প্রায় ৬৪ বছর বয়সে রাজেন্দ্রপ্রসাদ দিল্লীতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন।(২৪) রাজেন্দ্রপ্রসাদের মৃত্যুতে তাঁর ফিরে আসার অপেক্ষারত মানুষজন স্বভাবতই শোকাস্তব্ধ হয়ে পড়েছিলেন। তাঁর মৃত্যু-সংবাদে লেখা হয়েছিল — "... এ দুঃসংবাদে রাজেন্দ্র বাবুর পরিচিত মাত্রই মর্ম্মাহত, গভীর দুঃখে মুহ্যমান হইয়াছেন! (তাঁর চরিত্রের গুণাবলীর উল্লেখ করে বলা হয়েছিল — ) ... তাঁহার অভাবের সংবাদে তাই কোচবিহারকে এমন বিচলিত,—শোকগ্রস্ত করিয়াছে। ... সহরের একটি গুণীর অভাব ঘটিল—এ কি কম পরিতাপ! ... আমরা বড় আশা করিয়াছিলাম—তিনি সুস্থ হইয়া আমাদের মধ্যে ফিরিয়া আসিবেন। ভগবানের ইচ্ছা অন্যরূপ—দীর্ঘকাল রোগভোগের যন্ত্রণার শেষ হইল বিদেশে (দিল্লী)। স্বদেশে আজ মুক্তাত্মা,—শান্তিময়ের ক্রোড়ে চিরশান্তিলাভ করুন। ... রায় পরিবার কোচবিহারে পুরাতন অধিবাসী—গণ্যমান্য পরিবার! পরিবারের উপযুক্ত সন্তান রাজেন্দ্রপ্রসাদ বহুগুণে গুণী। ... তাঁহার মৃত্যুতে আমরা সন্তাপগ্রস্ত ... সন্তানসন্ততি সহধর্ম্মিণীকে শোক সাগরে ভাসাইয়া তিনি মহাপ্রয়াণ করিলেন—এ শোকে সান্ত্বনা দিবেন সেই শান্তিময়-জীবন-দেবতা। তাঁহার পরিবারের সহিত সমবেদনা জ্ঞাপন ব্যতীত আমাদের আর কি সম্বল আছে।"(২৫) রাজেন্দ্রপ্রসাদের দেহত্যাগের পরের দিন অর্থাৎ ২৪ জানুয়ারী, তাঁর মৃত্যু সংবাদ প্রচারিত হওয়ার পর তাঁর স্মৃতির প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য কুচবিহারের অফিস-আদালত বন্ধ রাখা হয়েছিল।(২৬) ১৩৪৬ বঙ্গাব্দের ১১ বৈশাখ বা ১৯৩৯ সাধারণাব্দের ২৫ এপ্রিল, সরকারি তার-যোগে মাথাভাঙ্গায় রাজেন্দ্রপ্রসাদের মৃত্যু সংবাদ প্রেরিত হলে তার পরের দিন অর্থাৎ ২৬ এপ্রিল, মাথাভাঙ্গা বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বাবু বসন্তকুমার চক্রবর্তী, বি.এল.,-এর সভাপতিত্বে অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যগণ একটি শোকসভার অনুষ্ঠান করেছিলেন। উক্ত শোকসভায় উপস্থিত সভ্যগণ রাজেন্দ্রপ্রসাদের — "... অশেষ গুণপনা—আইনে অভিজ্ঞতা, সঙ্গীতচর্চ্চায় অসাধারণ বৈশিষ্ট্য এবং সর্ব্বোপরি অমায়িক চরিত্র ও ব্যবহারের বিষয় আলোচনা" করেছিলেন। পরিশেষে সমবেত 

সভ্যগণ দাঁড়িয়ে মৃতের আত্মার চিরশান্তি এবং তাঁর পরিবারবর্গের হৃদয়ে সান্ত্বনা প্রদানের জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা জানিয়ে সভা শেষ করেছিলেন।(২৭)


পরিবারিক জীবনে রাজেন্দ্রপ্রসাদ রায়ের সাথে লাবণ্যপ্রভা দেবীর (বসু) বিবাহ হয়েছিল। তাঁদের চার পুত্র ও তিন কন্যা ছিলো। পুত্ররা হলেন — সুনীলপ্রসাদ, অনিলপ্রসাদ, অমলপ্রসাদ ও শ্যামলপ্রসাদ। কন্যাদের মধ্যে প্রথমা কন্যার আলিপুরদুয়ারে কোনো এক মিত্র পরিবারে, মেজো কন্যার দিল্লীর কোনো এক গুহ পরিবারে এবং সেজো কন্যার তেজপুরে বিবাহ হয়েছিল, তাঁদের কারোর নাম জানা যায়নি। অপর দু'জন কন্যা অবিবাহিতা ছিলেন, তাঁরা হলেন — শান্তিলতা (শান্তি) ও প্রেমলতা (ভক্তি)।(২৮)


ব্যক্তি হিসেবে রাজেন্দ্রপ্রসাদ ছিলেন "অমায়িক" ও "সুমিষ্টভাষী"। তাঁর এই স্বভাবের জন্য তাঁর বন্ধু মহলও বিস্তৃত ছিলো। রাজেন্দ্রপ্রসাদের শোকবার্তায় তাঁর আন্তরিক-ব্যবহারের সম্বন্ধে লেখা হয়েছিল — "ষ্টেট্ প্লীডার হিসাবে তিনি ছোটবড় সকলকে আকৃষ্ট করেন নাই, তাঁহার সহৃদয়তায় সকলে মুগ্ধ ছিলেন"।(২৯) রাজেন্দ্রপ্রসাদের উল্লিখিত চারিত্রিক গুণাবলীর কথা পূর্বোক্ত মাথাভাঙ্গার শোকসভার আলোচনায় প্রতিধ্বনিত হয়েছে মাত্র। রাজেন্দ্রপ্রসাদ সম্বন্ধে বিশদে কোনো তথ্য পরিবেশিত না হলেও ১৯৭৫ সাধারণাব্দে কুচবিহারে আয়োজিত 'বঙ্গ সাহিত্য সম্মিলন'-এর ৩৮-তম অধিবেশন উপলক্ষ্যে প্রকাশিত কোচবিহার সমাচার সংবাদ পত্রিকার বিশেষ সংখ্যায় কুচবিহারের সঙ্গীত-চর্চা সম্বন্ধে উল্লেখ করতে গিয়ে সম্পাদক যোগেশচন্দ্র রায় লিখেছেন — "সঙ্গীতের মজলিসে ꣲরায় চৌধুরি সতীশচন্দ্র মুস্তাফি, ꣲরাজেন্দ্র প্রসাদ রায়, হইতে আরম্ভ করিয়া সরোজকুমার দেব রায়কত, ꣲআব্বাস উদ্দীন আমেদ, ꣲসুরেন্দ্রকান্ত বসুনিয়া, শ্রী জগদীশচন্দ্র ভৌমিক, জনাব সামসেল মিঞা, শ্রী চিন্তাহরণ রায় প্রভৃতির নাম শ্রদ্ধার সহিতই স্মরণ করিতে হয়।"(৩০)

রাজেন্দ্রপ্রসাদ ও লাবণ্যপ্রভার সন্তানদের মধ্যে সুনীলপ্রসাদ সঙ্গীত জীবনে প্রতিষ্ঠা-লাভ করেছিলেন। তাঁর নিজেস্ব একটি সঙ্গীত-শিক্ষায়তন ছিলো। তিনি অবিবাহিত ছিলেন এবং অকালে প্রয়াত হয়েছিলেন। অনিলপ্রসাদ ও শ্যামলপ্রসাদ উভয়ে তবলা শিক্ষা করেছিলেন এবং সুকণ্ঠের অধিকারী ছিলেন। শান্তিলতা ও প্রেমলতা উভয়ে সঙ্গীত শিক্ষা করেছিলেন। শান্তিলতা এস্রাজ ও প্রেমলতা সেতার শিখেছিলেন। প্রেমলতা রাগাশ্রয়ী সঙ্গীতচর্চা করতেন, নজরুল গীতি, লোকগীতি প্রভৃতিও গাইতেন। তাঁর পিতৃদেব রাজেন্দ্রপ্রসাদের অনুরূপ প্রেমলতার কণ্ঠে দরাজ ছিলো।(৩১) ১৯৮০-র দশকেও রায় বাড়ি কুচবিহারে "নাম করা গানের বাড়ী" বলে পরিচিত ছিলো।(৩২) রাজেন্দ্রপ্রসাদের ও লাবণ্যপ্রভা- র সন্তানরা প্রত্যেকেই এখন গত হয়েছেন, তাঁদের উত্তরসূরীরা কুচবিহার ও দিল্লী-সহ বিভিন্ন জায়গায় বসবাস করছেন। 

কুচবিহারের পুরনো সঙ্গীত-বৃত্তের বিশেষত রাগ-প্রধান সঙ্গীত-বৃত্তের ক্রমশঃ অবলুপ্তি বা ধারাবাহিকতা ক্ষুণ্ণ হওয়া, রাজেন্দ্রপ্রসাদের কণ্ঠ রেকর্ডবন্দী না হওয়া, তাঁর নামে স্থায়ী কোনো স্মারকের অনুপস্থিতি, লেখনীর অভাব, সময়ের সাথে সাথে রায় পরিবারের বহুধা বিভাজন ও দেশ-বিদেশে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যাওয়া, বর্তমান কালে জনসাধারণের উদাসীনতা প্রভৃতি কারণে যেন বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে গিয়েছেন এককালের উত্তরের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত-শিল্পী রাজেন্দ্রপ্রসাদ রায়। তাঁর স্মৃতিতর্পণের মাধ্যমে যদি মানুষের মনে পুনরায় তাঁর সঙ্গীত-প্রতিভা ও গুণাবলীর কথা অনুরণিত হয় তবে এই প্রবন্ধ রচনা স্বার্থক হয়েছে বলে ধরে নেওয়া যাবে।



নির্দেশিকা:


(১). চারি পাড়ার ঘোষ বংশের কুর্সিনামা (মুদ্রিত বংশলতিকা), আনুমানিক প্রকাশকাল: ১৯২৫ -১৯৩৫ সাধারণাব্দ।


আবুল ফজল আল্লামি বিরচিত আইন-ই-আকবরী-তে সুবা বাংলার 'সরকার বাজুহা'-য় অবস্থিত একটি পরগণা জাফর উজিয়াল ("Zafar Ajiyal")-এর উল্লেখ রয়েছে। [ — Jarrett H.S. (Transl.), The Ain I Akbari By Abul Fazl Allami (Translated From The Original Persian), Vol. II, Published By The Asiatic Society Of Bengal, Calcutta: Printed At The Baptist Mission Press, 1891, A'in XV, p. 129, pp. 137-138.] কিন্তু, এর সঠিক অবস্থান বা পরিসর কি ছিলো বলা কঠিন। জাফর উজিয়াল বাংলার 'উজিয়াল' উপাধি-যুক্ত পরগণাগুলির মধ্যে একটি ছিলো। [ — বন্দ্যোপাধ্যায় রাখালদাস, বাঙ্গালার ইতিহাস (প্রথম ভাগ), দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৩৩০ (বঙ্গাব্দ), প্রকাশক: শ্রীহরিদাস চট্টোপাধ্যায়, মেসার্স গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এণ্ড সন্স, ২০৩/১/১ কর্ণওয়ালিস ষ্ট্রীট, কলিকাতা, মুদ্রক: শ্রীপশুপতি চট্টোপাধ্যায়, ভিক্টোরিয়া প্রেস, ২১/১ মহেন্দ্র গোস্বামীর লেন, কলিকাতা, দশম পরিচ্ছেদ, পাল-বংশের অধঃপতন, পৃ. ২৮৯-২৯০।]

 

(২). তদেব।


উল্লিখিত ইদিলপুর সম্ভবত বাকলার প্রসিদ্ধ ইদিলপুর পরগণা। বাকলার ইদিলপুরে বহুকাল থেকে ব্রাহ্মণ, বৈদ্য ও কায়স্থ্য-গণের নিবাস ছিলো। ঊনবিংশ শতাব্দীতে ইদিলপুর পরগণা ঢাকা থেকে পৃথক হয়ে প্রথমে বাখরগঞ্জের এবং পরবর্তীতে ফরিদপুরের অন্তর্ভুক্ত হয়। পুরনো ইদিলপুর পরগণার সামান্য অংশ বাখরগঞ্জ জেলা ও অবশিষ্ট ফরিদপুর জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিলো। [ — সেন রোহিণীকুমার, বাকলা (বাখরগঞ্জের প্রত্নতত্ত্ব ও আধুনিক ইতিহাস), প্রকাশক: শ্রীসুধাংশুকুমার সেন, কীর্ত্তিপাশা, বরিশাল, ১৯১৫, Printed by J.C. Ray from the Wilkins Press, College Square, Calcutta, পঞ্চম অধ্যায়, পরগণা, পৃ. ২৮৯, ২৯২।] কলকাতার মোহিনীমোহন ঠাকুর পরিবারের একসময় ইদিলপুরে জমিদারী ছিলো। [ — Beveridge H., The District Of Bakarganj (Its History And Statistics), London: Trubner & Co., Ludgate Hill, 1876, Printed By Ballantyne, Hanson And Co., Edinburgh And London, Chapter IV, Financial History And Description Of The Parganas—2. Territorial Divisions of the District and their History, p. 129.] বর্তমানে ইদিলপুর বাংলাদেশের ঢাকা বিভাগের শরিয়তপুর জেলার অন্তর্গত।


(৩). তদেব।


(৪). বসু শুভময় (জন্ম: ৩১ জানুয়ারী, ১৯৬৭ সা.অ., কুচবিহার), সাক্ষাৎকার: ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২১।


রাজেন্দ্রপ্রসাদ রায়ের পৌত্র ও শ্যামলপ্রসাদ রায়ের পুত্র দিল্লী নিবাসী রামাশীষ রায়-এর ২০২১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর গৃহীত সাক্ষাৎকারে টাঙ্গাইলের আটঘড়ি গ্রামে একসময় তাঁদের নিবাস থাকার বিষয়ে তিনি সহমত পোষণ করেছেন।


(৫). রায় রামাশীষ, দিল্লী, সাক্ষাৎকার: ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১।


(৬). রায় দেবাশীষ, (জন্ম: ২১ আগস্ট, ১৯৬৪, শুক্রবার, কুচবিহার) সাক্ষাৎকার: ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১; দ্রষ্টব্য — পাল ঋষিকল্প, 'রাজ-আমলে কোচবিহার শহরের পারিবারিক দুর্গাপুজো প্রবর্তন, দুর্গোৎসব ও দুর্গামন্ডপ-এর ইতিহাস', চৌধুরী শুভাশিস (সম্পাদক), শারদছন্দ, ত্রয়োদশ বর্ষ, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ, ২০১৮ খ্রীস্টাব্দ, প্রকাশক: বয়েজ ক্লাব, শিবযজ্ঞ রোড, কোচবিহার, মুদ্রণ: চারু প্রেস, ১০৩ বি, ধনদেবী খান্না রোড, কোলকাতা ৫৪, পৃ. ১৩৫-১৩৬।


(৭). জেঙ্কিন্স স্কুল শতবার্ষিকী স্মরণী ১৯৬১, ৩শরা ফেব্রুয়ারী, ১৯৬১, জেঙ্কিন্স স্কুল, কুচবিহার, Jenkins School, Cooch Behar, Students passing out of the School, p. 2 এবং জেনকিনস স্কুলের কতিপয় কৃতী প্রাক্তন ছাত্র, পৃ. ৪, ৬ দ্রষ্টব্য।


প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কুচবিহারের খ্যাতনামা উকিল রায় সাহেব সুরেন্দ্রকান্ত বসু মজুমদার এবং জোতদার ও উকিল চন্দ্রমোহন দত্ত জেঙ্কিন্স স্কুলে পড়াকালীন রাজেন্দ্রপ্রসাদ রায়ের সহপাঠী ছিলেন এবং একই সাথে তাঁরা প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন।


(৮). The Annual Administration Report Of The Cooch Behar State For The Year 1919-1920, Cooch Behar: Printed At The Cooch Behar State Press, 1920, 1. Council Office, No. 1531, To His Highness The Maharaja Bhup Bahadur Of Cooch Behar. Dated, Cooch Behar, the 27th December, 1920. From H.J. Twynam, Vice-President, State Council, Victor Nityendra Narayan, Maharajkumar, Member, Hitendra Narayan, Maharajkumar, Member, B. Ghose, Secretary to His Highness, Member, Pramatha Nath Chatterjee, Judicial Member, State Council, Cooch Behar, p. 2, para 5.


(৯). The Cooch Behar Desk Gazetteer For The Year 1934, Published under Authority of the State, Printed At The State Press, Cooch Behar, 1934, Pleaders And Muktears, p. 31.


(১০). ঘোষাল শরচ্চন্দ্র ও বিশ্বাস জানকীবল্লভ (সম্পা.), কোচবিহার দর্পণ, পাক্ষিক পত্রিকা, ২য় বর্ষ, ২য় সংখ্যা, ১৬ই বৈশাখ, ১৩৪৬ সন, রাজশক ৪৩০, ইং ৩০শে এপ্রিল, ১৯৩৯ সাল, Registered No. C-2497, কোচবিহার ষ্টেট প্রেস হইতে অফিসার-ইন্-চার্জ কর্ত্তৃক প্রকাশিত, 'শোক-সংবাদ: সরকারী উকিল রাজেন্দ্রপ্রসাদ রায় মহাশয় পরলোকে', পৃ. ২৫।


(১১). পাল হরিশচন্দ্র, নোট-ডায়েরী (অপ্রকাশিত), পৃ. ১২৬।


রাজেন্দ্রপ্রসাদ রায় গাইবার সময় সম্ভবত দরবারী রাগের ধ্রুপদী সঙ্গীত বেশী গাইতেন বা গাইতে পছন্দ করতেন, বোধহয় সেকারণে হরিশচন্দ্র পাল তাঁর নোটে "ধ্রুপদ" শব্দটির আগে "দরবারী" লিখে রেখেছেন। "মোতী (?) মিঞার টপ্পা"-র পাশে "মধ্যমান" ও "আড়াঠেকা" লেখা দেখে অনুমান হয় টপ্পা-গুলি মধ্যমান ও আড়াঠেকা তালে ছিলো অথবা ওই দুটি তালের টপ্পা তাঁর গাইতে ভালো লাগতো। উল্লেখ্য যে উক্ত দুটি তালই চতুর্মাত্রিক ও সমপদী তাল। 


(১২). ঘোষাল ও বিশ্বাস, প্রাগুক্ত।


(১৩). তদেব।


(১৪). আহমদ আব্বাসউদ্দীন, আমার শিল্পী জীবনের কথা, প্রথম প্রকাশ: বইমেলা ২০০১, প্রকাশক: অমল সাহা, সৃষ্টি প্রকাশন, ৩৩ কলেজ রো, কলকাতা: ৭০০ ০০৯, ISBN 01-7870-025-5, কলেজ জীবন: দি সংস্ আই হার্ড নো মোর, পৃ. ৩০।


(১৫). রায় দেবাশীষ ও রায় শর্মিষ্ঠা, সাক্ষাৎকার: ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১; রায় রামাশীষ, সাক্ষাৎকার: ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১।


(১৬). পাল ড. নৃপেন্দ্রনাথ, নানা প্রসঙ্গে কোচবিহার, প্রকাশকাল: কোচবিহার জেলা বইমেলা, ১৪২৪ (জানুয়ারী, ২০১৮), প্রকাশক: অণিমা সাহা, অণিমা প্রকাশনী, ১৪১, কেশবচন্দ্র সেন স্ট্রীট, কলকাতা: ৭০০ ০০৯, যান্ত্রিক শব্দ গ্রহণ: ডি.এস. প্রিন্টিং ওয়ার্ল্ড, কেশব রোড, কোচবিহার, মুদ্রক: মর্ডান প্রেস, ১১, রাজা সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার, কলকাতা: ৭০০ ০১৩, কোচবিহার রাজবাড়ীর অজানা কথা, পৃ. ১১০।


(১৭). বসু, প্রাগুক্ত।


রায় পরিবারের দৌহিত্রর পুত্র শুভময় বসু তাঁর ঠাকুরমা পূর্ণিমা দেবীর (জন্ম: ১৯০৯ সা.অ., কুচবিহার—মৃত্যু: ১৯৯৫ সা.অ., জানুয়ারী, কুচবিহার) কাছে যে গল্প শুনেছিলেন সে অনুসারে — "১৯২৪ সাল (সা.অ.) নাগাদ ঠাকুরমার বিবাহের আগে কোনো একসময় মুকুন্দ দাসের আসর দেখার জন্য মহারাজা রাজপরিবারের কয়েকজন সদস্য-সহ বাড়িতে (রায় বাড়ি) এলে পর মহারাজাকে প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী একটি পেতলের থালার ওপর লাল রেশমের কাপড় পেতে দুটি সোনার গিনি দিয়ে নজর প্রদান করা হয়েছিল। রীতি অনুসারে মহারাজা গিনি দুটি স্পর্শ করেছিলেন মাত্র। সেগুলি ট্রেজারীতে জমা পড়ে গিয়েছিল।" উক্ত "মহারাজা" খুব সম্ভবত যে মহারাজা জিতেন্দ্র নারায়ণ শুভময় বাবু তাঁর সাক্ষাৎকারে সেকথা জানিয়েছেন। রায় বাড়িতে চারণকবি মুকুন্দ দাস-এর আগমন বিষয়ে 

রাজেন্দ্রপ্রসাদ রায়ের পৌত্র ও অমলপ্রসাদ রায়ের পুত্র দেবাশীষ রায়, ২০২১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর, গৃহীত সাক্ষাৎকারে তাঁর সম্মতি জানিয়েছেন। 


দিনহাটার নায়েব আহিলকারের আয়োজনে একটি অনুষ্ঠান করার পর কোনো একদিন দিনহাটার গুর্দ্দি বাজারের প্রসিদ্ধ জমিদার ও সংস্কৃতিপ্রেমী জগদীশচন্দ্র মুস্তোফীর বাড়িতেও চারণকবি মুকুন্দ দাসের নিমন্ত্রিত হয়ে আসা ও ঘরোয়া অনুষ্ঠান করার জনশ্রুতি বহুল প্রচলিত। [ — সিতাংশু শেখর মুস্তোফী, (জন্ম: ২১ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৮), সাক্ষাৎকার: ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২১।]


প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গানের আসর বিষয়ে হরিশচন্দ্র পালের নোট-ডায়েরী (পৃ. ১৬৬) থেকে জানা যায় (বিশিষ্ট প্রশাসক ও লেখক — ) শরৎচন্দ্র ঘোষাল সেতার ও বীণ বাজাতেন। তিনি চাকরি-জীবনে তাঁর কার্যালয় থেকে ফিরে উল্লিখিত যন্ত্রগুলি "তন্ময় হয়ে" অনুশীলন করতেন। তাঁর সাথে তবলা বাজাতেন কোনো একজন "সিদ্ধেশ্বর বাবু" এবং "মাঝে মধ্যেই গান গাইতেন রাজেন বাবু"। উল্লিখিত "রাজেন বাবু" রাজেন্দ্রপ্রসাদ রায় হওয়ার সম্ভবনাই প্রবল। প্রথমত শরৎচন্দ্র ও রাজেন্দ্রপ্রসাদ প্রায় সমসাময়িক ছিলেন, উভয়েই কুচবিহার রাজ্যের চাকরিতে উচ্চপদে আসীন ছিলেন এবং সংস্কৃতির জগতে বিচরণ করতেন। যদি প্রকৃত অর্থে উক্ত "রাজেন বাবু" রাজেন্দ্রপ্রসাদ হয়ে থাকেন তবে এই তথ্যটি থেকে তাঁর সঙ্গীতবৃত্তের একটি আভাস পাওয়া যায়। যদিও অনুমান ব্যত্যয় আর কোনো প্রমাণ নেই। উল্লেখ্য যে কোচবিহার দর্পণ পত্রিকায় সম্পাদকের কলমে রাজেন্দ্রপ্রসাদের মৃত্যু সংবাদ প্রকাশের সময় শরৎচন্দ্র ঘোষাল ও জানকীবল্লভ বিশ্বাস পত্রিকার যুগ্ম-সম্পাদক ছিলেন। 


(১৮). রায় দেবাশীষ ও রায় শর্মিষ্ঠা, প্রাগুক্ত।


বৈঠকখানা ঘরটি এখনও (১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১) অংশত বর্তমান। এই ঘরটির পশ্চিমদিকে ছিলো রাজেন্দ্রপ্রসাদ রায়ের ওকালতির জন্য নির্দিষ্ট অধুনালুপ্ত পৃথক বৈঠকখানা। 


(১৯). পাল ড. নৃপেন্দ্রনাথ, প্রাগুক্ত, কাজী নজরুল ইসলাম ও কোচবিহার, পৃ. ২১১-২১৪।


রায় বাড়ির গানের আসরে কাজী নজরুল ইসলাম যে হার্মোনিয়ামটি বাজিয়ে গান গেয়েছিলেন সেটি এখনও (১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১) রায় পরিবারে সচল ও সুরক্ষিত।  


(২০). আহমদ, প্রাগুক্ত।


(২১). তদেব।


(২২). ঘোষাল ও বিশ্বাস, প্রাগুক্ত।


(২৩). The Cooch Behar Gazetteer For The Year 1943, Published under authority of the State, Printed At The State Press, Cooch Behar, 1943, Superintendents Of The State And Vice-Presidents, State Council, From The Time Of The Formation Of The State Council, p. 57.


(২৪). ঘোষাল ও বিশ্বাস, প্রাগুক্ত।


(২৫). তদেব। 


(২৬). তদেব। 


(২৭). ঘোষাল ও বিশ্বাস, প্রাগুক্ত, 'দেশ বিদেশের সংবাদ—স্থানীয় সংবাদ—মাথাভাঙ্গা সংবাদ: শোকসভা', পৃ. ৩০।


(২৮). রায় দেবাশীষ ও রায় শর্মিষ্ঠা, প্রাগুক্ত।


(২৯). ঘোষাল ও বিশ্বাস, প্রাগুক্ত, 'শোক-সংবাদ: সরকারী উকিল রাজেন্দ্রপ্রসাদ রায় মহাশয় পরলোকে', পৃ. ২৫।


(৩০). রায় যোগেশচন্দ্র (সম্পা.), 'কোচবিহারে— বঙ্গ সাহিত্য সম্মিলনের ৩৮-তম অধিবেশন', কোচবিহার সমাচার, বিশেষ বঙ্গসাহিত্য সম্মিলন সংখ্যা, ১০ম বর্ষ, ৪৭ সংখ্যা, ২৮শে মার্চ্চ, ১৯৭৫ ইং, বাং ১৪ই চৈত্র শুক্রবার ১৩৮১, Govt. Regd. No. 8904/65, Postal Regd. No. WB/JPG 10, কোচবিহার সমাচার প্রেস, কোচবিহার হইতে শ্রী যোগেশ চন্দ্র রায় কর্তৃক মুদ্রিত ও প্রকাশিত, পৃ. ২।


(৩১). রায় দেবাশীষ ও রায় শর্মিষ্ঠা, প্রাগুক্ত।


(৩২). রায় প্রেমলতা, 'আমার চোখে সুনীতি 

একাডেমী (স্মৃতি চারণ)', চক্রবর্ত্তী মমতা (সম্পা.), সুনীতি একাডেমী শতবর্ষ স্মারক সংখ্যা ১৯৮১, প্রকাশনায়: মমতা চক্রবর্ত্তী (সম্পা.), কৃষ্ণা চৌধুরী (রায়) ও প্রভা সরকার (সহ-সম্পা.), প্রকাশকাল: ১৯৮১ ইং, মুদ্রণে: শ্রী জহর লাল মৈত্র, নিউ জয়ন্তী প্রেস, নেতাজী রোড, নিউটাউন, কুচবিহার, পৃ. এগার।


কৃতজ্ঞতা স্বীকার: ড. নৃপেন্দ্রনাথ পাল, শ্রী সমীর চট্টোপাধ্যায়, শ্রী সমীর কুমার ভট্টাচার্য, শ্রী দেবাশীষ রায়, শ্রীমতী শর্মিষ্ঠা রায়, শ্রী রামাশীষ রায়।


[সৌজন্য: প্রবন্ধটি চলতি বছর (২০২১) কুচবিহারের তরুণদল হাজরা পাড়া ক্লাবের শারদীয় স্মরণী-তে প্রকাশিত হয়েছে, এখানে মূল প্রবন্ধটি অপরিবর্তিতভাবে পুনরায় প্রকাশ করা হলো।]

5 মন্তব্যসমূহ

  1. I, Subhasish Roy( grandson of Rajendra Prasad Roy & youngest son of Amal Prasad Roy) am expressing my heartiest gratitude for publishing the article of my grandfather late Rajendra Prasad Roy.

    উত্তরমুছুন
  2. Nicely articulated. Thoroughly researched work. খুব ভালো লাগলো।

    উত্তরমুছুন
  3. অতীতের অনুপম স্মৃতি ।

    উত্তরমুছুন
  4. খুব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। সমৃদ্ধ হলাম।

    উত্তরমুছুন
  5. শ্রমসাধ্য কাজ করেছেন লেখক। লেখাটি খুবই তথ্য সমৃদ্ধ।

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন