রম্যরচনা | স্বপন কুমার দত্ত

 


পেঁ দিয়ে শুয়োর


শিবরাম বাবুর নাতির বয়স দেখতে দেখতে

চার বছর হতে চললো।কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়,

শিশুটির বয়স অনুযায়ী বাড়বাড়ন্ত মোটেই নেই।

এখনও ঠিকমত হাঁটতে পারেনা।চেহারাও কাঠির

মত।ডাক্তারবাবুর বক্তব্য,ওর কোন অসুখ নেই।

চিন্তার কোন কারণ নেই।শুধু শুধু ওষুধ কেন

দিব।

           কিন্তু শিবরাম বাবু এ নিয়ে খুব চিন্তিত।

সেদিন প্রাতঃ ভ্রমণে বেরিয়ে তার নাতিকে নিয়ে

ভজা দার দোকানে বসেন চা পান করতে।নানা

আলোচনা চায়ের দোকানে হয়েই থাকে।

           কথা প্রসঙ্গে তার নাতির কথাও এসে পড়ে।বাঙালির চিরকালীন স্বভাব, বিনা অনুরোধে কাউকে উপদেশ প্রদান করা।" আরে

বাচ্চাটাকে সবজির জ্যুস খাওয়াতে হবে", কারোর মন্তব্য " না না খাওয়ালে মুরগির জ্যুস

খাওয়াও" ।" শুধু জ্যুশে হবেনা,ওকে ভিটামিন

ট্যাবলেট খাওয়াতে হবে" ইত্যাদি।

          সেই আড্ডায় আমিও থাকায় ভাবছি,কি

সাজেশন দেওয়া যায়।

           হটাৎ কে যেন বলে উঠলো, " ওকে

পেঁদি য়ে শুয়োর খাইয়ে দিন,সব ঠিক হয়ে যাবে।"

           আমি সাধারণত রাগী না,কিন্তু এই 

অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ দেখে মটকা গরম হয়ে গেল।

সামনে তাকিয়ে দেখি,ল্যাম্পপোস্টের নীচে 

রিকশায় বসে রিকশাওয়ালা পচা বিড়ি টানছে

ফুঁক ফুঁক করে।কথাটা বলেই হাসছে ফ্যাক ফ্যাক করে।এক ধমক দিয়ে বললাম, " হতভাগা,

ইয়ার্কি পেয়েছিস? ঐটুকু একটা বাচ্চাকে পেদাবে?"

          ঘাবড়ে গিয়ে পচা দুদিকে জোরে জোরে

মাথা নাড়তে নাড়তে বলল, " না না তা কেন?

বাচ্চাকে কে পেদাতে বলেছে?"

          " তাহলে কি শুয়োর টাকে পেদাবো?"

          জিভ কেটে নিজের দুটো কান মূলে পচা

রিকশাওয়ালা বলল, " ছি ছি! আমি কি তাই

বললাম নাকি?"

           " তাহলে কি বললি?"

           " বললাম, পেদিয়ে শুয়োর খাওয়াতে"।

   হটাৎ অনুভব করলাম,পিছন থেকে কে যেন

কাঁধে টোকা দিচ্ছে। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি,আমার

প্রতিবেশী সেন বাবু। মনে হয় পচার উপদেশ টা

শুনতে পেয়েছেন।বলেন," বুঝলেন না? পেদি য়ে

খাওয়ানো মানে হচ্ছে একসঙ্গে অনেকখানি

খাওয়ানো .....তাই না পচা?"

           প্রচণ্ড জোরে ঘাড় নাড়াতে নাড়াতে পচা

বলল, " না না না তা নয়। আমি বলছি পে দিয়ে

শুয়োর খাওয়াতে"।এবার পচা রিকশা থেকে

নেমে রাস্তার ওপারে গিয়ে আমাদের হাতছানি

দিয়ে ডেকে বলল, " আসুন আমার সঙ্গে"।

           আমরা ওর পেছন পেছন ওষুধের দোকানে ঢুকলাম।দোকানদার এতো লোকজন

দেখে ভয় পেয়ে জিজ্ঞেস করল, " কি ব্যাপার,

সিরিয়াস কিছু নাকি?"

           পচা আমাদের দেখিয়ে বলল, " এনাদের

পে দিয়ে শুয়োর দাও তো"।থতমত খেয়ে দোকানদার জিজ্ঞেস করল, " পে দিয়ে কি?"

             " আরে,ওই যে, টি ভিতে দেখায় না,

পে দিয়ে শুয়োর"।

             দোকানদার কিছুক্ষণ ভেবে ভেতর থেকে একটা বড় সড় কৌটো এনে ঠক করে

কাউন্টারের উপর রাখল । তুলে দেখলাম,

" Pedia sure" । আমাদের কাছে উন্মোচিত

হল, একটা বড় রহস্য আর শিবরাম বাবু ও

হলেন নিশ্চিন্ত। 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন