অন্য অপেক্ষা





 মানস রায় 


কলিগ দের মধ্যে চলতে থাকা ইদানীং কালের ফিসফাস গুঞ্জনের বিজ্ঞাপন টি পড়ে নিতে খুব বেশি দিন সময় লাগেনি শ্রীতমার। দিন কে দিন মুখরোচক খবর গুলোর বহর বাড়ছিল বই কমছিল না। শ্রীতমা অবশ্য এসবেতে আমল দেবার মেয়ে নন। কোনোকালেই আমল দেন নি এসব কথায়। 
বছর একত্রিশের ঝক ঝকে স্মার্ট শ্রীতমা বেরা একটি সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সহঅধ্যাপিকা, সাথে রবীন্দ্র সাহিত্যে গবেষণাও করছেন। কর্ম জগতের খুব কম লোকই তার অতীত জীবনের ব্যক্তিগত বিষয়ে অবগত , অনিমেষ বাবু এদের  মধ্যেই একজন। অনিমেষ রায় সিনিয়র প্রফেসর। পঞ্চাশ এর কোটায় এসেও ঝলমলে চেহারার এই অবিবাহিত ভদ্রলোক যুক্ত রয়েছেন বহুবিধ কাজে। লেখা লিখি করেন, করেন একটি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনার কাজও। 
এদিকে শ্রীতমা র অতীত ইতিহাস বলতে গেলে , বিয়ে হবার মাত্র বছর দুয়েকের মাঝেই স্বামীর সাথে বনিবনা না হওয়ায় একলা থাকেন তিনি। একটি মাত্র সন্তান কে মায়ের কাছে রেখে, অন্য শহরে এসে নিজের উচ্চাকাঙ্খা ও জেদ কে সম্বল করেই অধ্যাপনা ও গবেষণার কাজে যুক্ত হয়েছেন সে । বানিয়েছেন নিজস্ব এক জগৎ। হয়ত তাঁদের দুজনার ব্যক্তিগত জীবনের এমনতর প্রোফাইল ই চারদিকে চলা গুঞ্জন গুলোকে উসকে দিচ্ছিল আরও একটু খানি। 
 অনেকটা সময় একসাথে কাটান তারা, স্টাফ রুম থেকে শুরু করে মাস শেষে সাহিত্যে সম্মেলন এর বিভিন্ন আড্ডা সর্বত্রই দুজন কে হামেশাই দেখা যায় প্রায় । অনিমেষ বাবু মাঝে মধ্যে ভাবেন,  শ্রীতমা হয়ত কিছু একটা বলতে চায় তাকে তবে উভয়ের মধ্যে একটি শ্রদ্ধার সম্পর্ক থাকায় মুখ খোলেন না তাঁদের কেউই। সম্প্রতি একটি কবিতার বই প্রকাশ করেছেন অনিমেষ বাবু, সেটা নিয়েও অনেকসময় আলোচনা হত তাঁদের , পাঠ প্রতিক্রিয়া চাইতেন তিনি । একনিষ্ঠ পাঠকের মতই স্যার এর আবদার রাখতেন শ্রীতমা , প্রতিক্রিয়া দিতেন উৎসাহের সাথে । 
কিন্ত এবারে বদলি টা নিতেই হচ্ছে প্রফেসর রায় কে , তার নিজের এলাকার এক কলেজে স্থায়ী অধ্যক্ষের পদে বদলি হতে হচ্ছে তাকে। ছাত্র মহল থেকে শুরু করে, সহকর্মীবৃন্দ, প্রিয় প্ৰফেসরের ফেয়ারওয়েল এর আয়োজনে খামতি রাখছিল না কেউই , অনুষ্ঠান হচ্ছিল দফায় দফায়। 
এতদিনের চলা নানা গুঞ্জন ও আবেগেও এবারে ইতি পড়তে চলেছে দেখে আরও একবার অনিমেষ বাবুর মুখোমুখি হলেন শ্রীতমা। তাঁদের দীর্ঘদিনের আড্ডায় সাহিত্য বিষয়ক আলোচনাই যে বেশি প্রাধান্য পেত,  তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা,  এবারেও অন্যথা হল না তার, তবে এবারে অতিরিক্ত একটি কথা শ্রীতমা যোগ করলেন আড্ডা শেষে - ভালো থাকবেন স্যার, বই প্রকাশের কোনো অনুষ্ঠানে হয়ত শিগগিরই দেখা হবে আমাদের, আপনার এতদিনের সান্ন্যিধ্য বড় প্রাপ্তি আমার , আমাদের সবারই । জানবেন আপনার অনেক অনেক গুণমুগ্ধের তালিকায় এই একজন অধম ও রয়েছে - শ্রীতমা বললেন।
অনিমেষ বাবু হাসলেন, প্রত্যুত্তর দিলেন, কখনও কখনও গুণমুগ্ধ হয়ে থাকার স্বাদ, কিছু প্রাপ্তি র চাইতেও কম আনন্দের নয়। তুমিও তাই জেনো, ভালো থেকো, শুভকামনা নিরন্তর। (সমাপ্ত )

1 تعليقات

  1. একটা অপূর্ব লেখনী, সমাজের কোনো না কোনো সত্যকে ছোট গল্পের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে।

    ردحذف

إرسال تعليق

أحدث أقدم